INFO
কবিতার সত্য উচ্চারণে আর আবৃত্তির দোলায়িত ছন্দে লায়লা আফরোজ বহু ক্রোশ হেঁটে আসা একজন মানুষ। লায়লা আফরোজের শুরুটা হয়েছিল গান দিয়ে। বুলবুল ললিতকলা একাডেমী এবং ছায়ানটে রবীন্দ্রসংগীত শিখেছেন ১৭ বছর। লায়লা আফরোজ রবীন্দ্র সংগীতের নাম-করা শিল্পী হতে পারতেন। সমূহ সম্ভাবনাও ছিল। ’৭৯ সালে বাফা থেকে এই বিদ্যা-সাধনায় উত্তীর্ণও হয়েছিলেন কৃতিত্বের সাথে। অথবা, জাঁদরেল রাজনীতিবিদ হবার একটা সুযোগও এড়িয়ে গেছেন। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে বিপ্লবী দায়িত্ব পালনের পরও রাজনীতিতে আর অগ্রসর হননি। অনেক কিছুই হয়তো হতে পারতেন। কিন্তু আবৃত্তির প্রতি বাঁধনহারা দূর্বার আকর্ষণ তাঁকে টেনে নিয়ে আসে আবৃত্তিজগতে। ১৯৭৯ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সংস্পর্শে এসে আবৃত্তির প্রতি বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হন। আবৃত্তির ত্রৈমাসিক কোর্স সম্পন্ন করেন। তাঁর ভাষায়, 'বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিবেশ আবৃত্তি চর্চার ক্ষেত্র তৈরি করেছিল। যেহেতু আবৃত্তির কোনো স্বরলিপি নেই, তাই দলবদ্ধ চর্চা, মেধা-মনন-প্রজ্ঞা ও শিল্পবোধের সমন্বয়ে আবৃত্তির কলাকৌশল আয়ত্ত করতে হয়েছে।' ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকা অবস্থায় যৌথভাবে তিনি গড়ে তোলেন 'স্বরিত আবৃত্তি চক্র'। তৎকালীন স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন প্রাঙ্গণে পরিবেশন করেন প্রতিবাদী কবিতার আবৃত্তি প্রযোজনা 'প্রসূনের জন্য প্রার্থনা'। লায়লা আফরোজ বলেন, 'স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এবং স্বৈরশাসকের পতন ঘটানোর হাতিয়ার হিসেবে আবৃত্তিকে বেছে নিয়েছিলাম আমরা।' ১৯৬৬ সালে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম একক আবৃত্তি অ্যালবাম 'সৃষ্টি'। অ্যালবামটি শ্রোতামহলে দারুণ সাড়া ফেলে। 'আমরা অনার্য-আমরা দ্রাবিড়', 'দিনের শেষে' প্রভৃতি একক আবৃত্তি প্রযোজনা দিয়ে তিনি নন্দিত হয়েছেন।
’৮৩ থেকে ’৮৮ পর্যন্ত তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে আবৃত্তি সংগঠন স্বরিত’র সাথে যুক্ত ছিলেন। ’৯১ সালে গড়ে তুলেছেন মুক্তব পদাবলী। এখন পর্যন্ত তিনি মুক্তব পদাবলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। স্বরিত এবং মুক্তব পদাবলী থেকে লায়লা আফরোজ অসংখ্য আবৃত্তি প্রযোজনায় অংশ নিয়েছেন। তার উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে প্রসূনের প্রার্থনা, আমরা অনার্য আমরা দ্রাবিড়, রূপালী স্নান সোনালী কাবিন, আনন্দকুসুম, ঘূর্ণি-ওঠা ধূলো, কতিপয় রমণীর সংলাপ।
কাব্যনাট্যের মধ্যে আছে ফাউস্ট, ওরা কয়েকজন, প্রথম পার্থ (নির্দেশনাসহ), অনাম্নী অঙ্গনা (নির্দেশনাসহ) এবং প্রথম একক আবৃত্তির অনুষ্ঠান করেছেন ১৯৯৬ সালে। ব্রিটিশ কাউন্সিল মিলনায়তনে এই একক স্যার শিরোনাম ছিল তামাটে এক দ্রাবিড় গ্রিয়ট।
লায়লা আফরোজ দ্বৈত অনুষ্ঠান করেছেন তিনটি। তার মধ্যে একটি ছিল দিবারাত্রির কাব্য ও অন্য দুটি যুগলসি। কলকাতা এবং ঢাকায় অনুষ্ঠিত যুগলসি শিরোনামের দুটি অনুষ্ঠানেই তাঁর সাথে শিল্পী ছিলেন হাসান আরিফ। ‘সৃষ্টি’ নামে লায়লা আফরোজ-এর একটি একক অডিও বের হয়েছে ’৯৬ সালে। এছাড়াও তিনি অনেকগুলো যুথবদ্ধ ক্যাসেটে আবৃত্তি করেছেন। শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা, কালো মানুষের গান, প্রথম পার্থ, সেদিন প্রথম, চির প্রণম্য অগ্নি, সবার উপরে মানুষ সত্য ও ঐহিত্যের অঙ্গীকার তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
একক শিল্পের গণ্ডি পেরিয়ে আবৃত্তি যখন দলগত শিল্প হিসেবে যাত্রা আরম্ভ করেছে লায়লা আফরোজ সেই সময়ের সমান সারথি। সাংগঠনিক চর্চায় নিবেদিত থেকে ধ্যানী শিল্পীর আদলে তিনি নিজের প্রতিকৃতি এঁকেছেন। মুহূর্তের উৎকর্ষ সাধনায় ব্যাপ্ত থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যে হয়েছেন ভাস্বর।
সামাজিক বিরুদ্ধ আবর্তে হারিয়ে গেছেন কত সহযাত্রী শিল্পী-কর্মী। লায়লা আফরোজ দাঁড়িয়ে আছেন অনড় বিশ্বাসে। রূপনারানের কূলে জেগে উঠবার পর আর ঘুমিয়ে পড়েননি। সফল আবৃত্তি শিল্পীদের মধ্যে অনন্য লায়লা আফরোজ ভালোবেসে ফেলেছেন কঠিনেরে। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং বলেছেন, যে কখনো করে না বঞ্চনা। সুতরাং হারানোর ভয় নেই, শুধু জয়ের আনন্দ। শিল্পের সুষমায় সিক্ত হতে হতে তিনি এগিয়ে যাবেন বহুটা পথ। কেননা আবৃত্তির উজানী স্রোতে একজন লায়লা আফরোজ কেবলি বহমান ...
Recitation List
Click Here & Download - Sigle Link
or
NB: WHEN YOU CLICK THE LINK BELOW A NEW SCREEN
AFTER CLICK SKIP AD TO DOWNLOAD ALL SONGS
AFTER CLICK SKIP AD TO DOWNLOAD ALL SONGS
0 comments:
Post a Comment